এর নাম “যৌক্তিক প্রত্যাশার তত্ব”। ১৯৯৫ সালে অর্থনীতিবিদ রবার্ট লুকাস এই তত্বের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। এর সারমর্ম হচ্ছে – মানুষের প্রত্যাশা নির্ধারিত হয় তার অতীত অভিজ্ঞতা, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত, এবং নিজস্ব বুদ্ধি-বিচক্ষনতার উপর। এতে করে প্রত্যাশা গুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে (কল্পনা নয়, বরং) সত্যে পরিণত হয়।
(more…)Category: Economics
Healthcare Service Manager
This article describes Sunk Cost Fallacy that explains why we often take irrational decision and why sometimes it is a good idea to forget the past.
(more…)Forest fires are an essential part of a healthy ecosystem. They rid the forest of old underbrush that otherwise could serve as fuel for an even larger fire.
(more…)[১: একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ]
একবার ‘হিসাব রক্ষক’ পদে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। অনেক ঝাড়াই-বাছাই শেষে তিনজন আবেদনকারীকে ভাইভা বোর্ডে আমন্ত্রন জানানো হয়। যাদের মধ্যে ছিলেন একজন গণিতবিদ, একজন হিসাব রক্ষক এবং একজন অর্থনীতিবিদ। প্রথমে গণিতবিদের পালা। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো –
১+১ = কত?
এ আবার কেমন প্রশ্ন – জিজ্ঞাসা করলেন গণিতবিদ। এ তো সহজ – ১ + ১ এ ২ হবে।
এর পর হিসাব রক্ষকের পালা। তাকেও জিজ্ঞাসা করা হলো –
১+১ = কত?
হিসাব রক্ষক জবাব দিলো – ১+১ = ২ । তবে আপনি চাইলে ১০ থেকে ১৫% এদিক-ওদিক করে দিতে পারব।
সব শেষে এলেন অর্থনীতিবিদ। তাকেও একই প্রশ্ন –
১+১ = কত?
প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে অর্থনীতিবিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে প্রশ্নকর্তার কানের কাছে গিয়ে ফিস-ফিস করে জিজ্ঞসা করলেন
– স্যার, আপনি কত চান?

[২: ব্যর্থ ভালবাসার গল্প]
ছাত্র জীবনে পড়া অবস্থায় অর্থিনীতি সাবজেক্ট এর প্রেমে পড়েগিয়েছিলাম। অর্থিনীতি আমার কাছে শুধু কিছু রস-কষ হীন গ্রাফ আঁকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কোন না কোন ভাবে এই নিরস গ্রাফগুলোর মাঝে আমি অদ্ভূত সুন্দর দর্শন খুঁজে পেয়েছিলাম। এই খুঁজে পাওয়ার পেছনে অন্তত পাঁচ জন মানুষের অবদান আছে। ওনারা হলেন – ক্যাম্পবেল আর. ম্যাকননেল, স্ট্যানলি এল. ব্রু, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ – মনতোষ চক্রবর্তী, ইমরানুল হক , এবং মাহমুদুল হাসান ফৌজি।
‘একজন মানুষ সুযোগ থাকা সত্বেও কখন চুরি করবে আর কখন করবে না’ – এমন অদ্ভুতুড়ে প্রশ্নেরও যুতসই ব্যখ্যা আছে অর্থনীতিতে। যবে থেকে এই সৌন্দর্য উন্মোচন করতে পেরেছি, আমি শুধু খুঁজে বেড়িয়েছি নীরস গ্রাফের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দর্শনের গল্প।
ফলশ্রুতিতে ৪/৫ টা অর্থনীতি কোর্সের মধ্যে থেকে একটা কোর্সের A+ মিস হয়ে যায়। কারন, পরীক্ষার খাতায় শুধু দর্শনের গল্প লিখলেই A+ পাওয়া যায় না। সবগুলো গ্রাফের অঙ্কও সমাধান করে আসতে হয়।
পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে যেদিন জানতে পারলাম – প্রিয় অর্থনীতিতে আমি A+ পাইনি সেদিন খুব ক্ষোভ হয়েছিল। চারপাশে আমি অন্ধকার দেখছিলাম।
একই অভিজ্ঞতা হয়েছিলো ‘মার্কেটিং রিসার্স’ কোর্সে। বন্ধুদের মধ্যে আমিই প্রথম মার্কেটিং এ গবেষণাপত্র প্রকাশ করি। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় কি জানেন? ‘মার্কেটিং রিসার্স’ কোর্সেও আমার A+ মিস হয়েছিলো।
আমি পাগলের মত ভালবাসতে জানি। কিন্তু প্রায়ই নিয়তি আমাকে একটা খুঁত ধরে হারিয়ে দেয়। এটা প্রায়ই হয়।
Moral of the story:
ভালবাসারা (হয়ত) নিখুঁত হয় না।
(হয়ত) ভালবাসলেই মন পাওয়া যায় না।
[৩: জর্জ বুলের বিয়ে]
যাই হোক, আড়ালে লুকিয়ে থাকা দর্শনের গল্প খোঁজার প্রয়াসটা শুরু হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অনেক আগেই। একাদশ শ্রেণীতে প্রথম যখন জর্জ বুল এর বুলিয়ান এলজেব্রা পড়তে শুরু করি তখন অবধারিত ভাবে সবার মতই আমারও খটকা লাগে ১+১ এ কেমন করে ২ না হয়ে এক হয়। শিক্ষক তখন ডিজিটাল সার্কিট এর On & Off দিয়ে বুলিয়ান যোগের ব্যাখ্যা করেছিলেন।
কিন্তু দর্শনের গল্প খুঁজতে থাকা আমি আরো কিছু জানতে উৎসুক ছিলাম। নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার মতই জানতে চেয়েছিলাম – জর্জ বুল ঠিক কোন উপলব্ধি থেকে শুধু শুন্য আর এক দিয়ে গণিতের জগতে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করার ব্রত নিয়েছিলেন। জানতে পারলাম – এত দিন সংখ্যা দিয়ে আমরা শুধু কোন কিছুর কম/বেশী পরিমান পরিমাপ করতাম। কিন্তু বুল সংখ্যাতত্ব দিয়ে কোন কিছুর পরিমান নয় বরঞ্চ কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের চরিত্র/অবস্থা কে ব্যাখ্যা করেছেন।
এবার বুলিয়ান এলজেব্রাকে কম্পিউটার লজিকের বাহিরেও প্রয়োগ করতে চাইলাম। ভাবলাম –
শুন্য যদি ”রাত” হয় তবে এক হচ্ছে ”দিন”।
শুন্য যদি “মৃত্যু” হয় তবে এক হচ্ছে “জীবন”।
শুন্য যদি “ভালবাসি না” করা হয় তবে এক হচ্ছে “ভালবাসি”।
অর্থাৎ জর্জ বুলের গণিত অনুযায়ী – একজন মানুষ হয় ‘বেঁচে আছে’ এই কথাটা সত্য, আর নতুবা মানুষটা ‘মরে গেছে’ এই কথাটা সত্য। সরকারী জন্ম-মৃত্যু রেজিষ্ট্রিতে একজন মানুষ একই সাথে জীবিত এবং মৃত হতে পারে না।
ঠিক তেমন ভাবে, কেউ একজন আমাকে হয় ভালবাসে আর নতুবা ভালবাসে না এর যে কোন একটা কথা সত্য। প্রেম-ভালবাসায় বুলিয়ান গণিতের প্রয়োগ দেখে আমি পুলকিত হলাম। ভাবতে লাগলাম, যদি –
আমি কোন মেয়েকে ভালবাসি ,
আর সে মেয়েটাও যদি আমাকে ভালবাসে,
তাহলে জর্জ বুলের তত্ব অনুযায়ী ১+১ = ১ হওয়ার কথা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা তো দু’জন মানুষ? তাহলে দু’য়ে মিলে এক হই কিভাবে?
তখন মনে পড়ল বিয়ের মন্ত্রের কথা –
"যদেতৎ হৃদয়ং তব, তদস্তু হৃদয়ং মম। যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব"
অর্থাৎঃ তোমার হৃদয় আমার হোক। আমার হৃদয় হোক তোমারি।
[ ৪: ফাজি লজিকের ফাঁপড়]
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে বন্ধুদের ভালবাসার গল্প শুনতাম।এক তরফা ভালবাসার গল্প, যেখানে একজন ভালবাসে অথচ অপরজনের ভালবাসা শুন্যের কোঠায়। দুতরফা ভালবাসার গল্প, যেখানে দু’জনই দু’জনকে ভালবাসে। জর্জ বুলের একে একে এক মিলে যাচ্ছে। ভালবাসে অথবা ভালবাসে না এমনসব পরিস্থিতি।
কিন্তু মহা ফাঁপড়ে পড়লাম তখনই যখন ভালবাসার গল্পে অভিমান আসতে শুরু করলো।
অভিমান এক আজিব কিসিমের জিনিস। এর বাহিরে থাকে কর্কশ রুক্ষতা অথচ ভেতরে থাকে পূর্ণ ভালবাসা।
খটকা লাগলো। কারন , এবার আর জর্জ বুলের এলজেব্রা কাজ করছে না। বুলিয়ান গণিতে ‘ভালবাসি’ অথবা ‘ভালবাসি না’ কেবল এই দুই পরিস্থিতিই সত্য। ‘ভালবাসি অথচ অভিমান করে মাঝ দরিয়ায় আছি’, এমন পরিস্থিতির কোন ব্যাখ্যা সেখানে নাই।
কি ব্যাপার? গণিতবিদরা কি তাহলে এমন পরিস্থিতির ব্যাপারে কিছুই বলে যান নি?
নাহ্, এমন তো হওয়ার কথা নয়। উত্তর খুঁজতে থাকলাম। জানতে পারলাম এম আই টি’র মেধাবী প্রফেসর লতফি যাদে’র ফাজি লজিকের তত্ব।
যদি প্রশ্ন করা হয় ‘এখন কি রাত?’ তবে বুলের বাইনারী ব্যবস্থায় উত্তর হবে – ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’; অন্যদিকে, ফাজি লজিকে হ্যাঁ অথবা না ছাড়াও আরো উত্তর হতে পারে – মধ্যরাত, শেষরাত, সুবহে সাদিক ইত্যাদি।
ভালবাসার গল্পে এর মানে হচ্ছে – ‘তুই আর আমাকে ফোন দিবি না’ বলে যদি আপনার বয়ফ্রেন্ড আপনাকে ব্লক করে রাখে তবে সেদিনই আপনি ‘সব শেষ’ মনে করে মন খারাপ করে আরেকটা বয়ফ্রেন্ড খুঁজতে যাবেন না। আপনি বরং ধৈর্য্য ধরুন। সে কেন অভিমান করেছে কারন খুঁজে বের করুন। এরপর উদ্ধারকারী জাহাজ সহ নিজে গিয়ে মাঝ দরিয়া থেকে তাকে টেনে-হিঁচড়ে তুলে নিয়ে আসুন। তারপর ভেঙ্গে যাওয়া বাইনারী লজিক আবার মিলিয়ে নিন –
১ + ১ = ১
আর প্রস্তুত হন সেট তত্বের সমীকরণ এবং ঐ অর্থণীতিবিদ হিসাব রক্ষকের জন্য যিনি পাল্টা জিজ্ঞসা করেছিলেন – ‘স্যার, আপনি কত চান’।
(ভালবাসায় সেট তত্বের গল্প আরেকদিন করব)
অর্থনীতিতে একটা তত্ব আছে, ইংরেজিতে এর নাম Moral Hazard. বাংলায় বললে সম্ভবত নৈতিক ঝুঁকি।
একটা উদাহরণ দেই। “বীমা” ব্যবসায়ের প্রচলন হয়েছিল ব্যবসায় এবং ব্যক্তি জীবনের সম্ভাব্য ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল – কিছু-কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাস হওয়া দূরে থাক, উল্টো ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন, গাড়ি চালকেরা বীমা না থাকলে সতর্কতার সাথে গাড়ী চালায়। কিন্তু বীমা থাকলে অনেকেই বেপরোয়া ভাবে গাড়ী চালায় আর মনে-মনে ভাবে যে দূর্ঘটনা হলে খেসারত দেবে বীমা কোম্পানি। এই ধরণের আচরণের ফলে – মহৎ উদ্দেশ্য ও বড় আশা নিয়ে শুরু করা বীমাকারী মুখ চুন করে হতাশ হয়।
মোরাল হ্যাজার্ড এর আরেকটা উদাহরণ হতে পারে স্কলারশিপ। অধিকাংশ স্কলারশিপের লক্ষ্য থাকে দরিদ্র এবং মেধাবী ষ্টডেন্টকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক ভাবে সহায়তা করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় – স্কলারশিপের জন্য এমনও কেউ আবেদন করে যে মেধাবী কিন্তু সেই অর্থে দরিদ্র নয়। উপরি ইনকাম কিংবা গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরার জন্য সে এই স্কলাশিপের আবেদন করে।
কি একটা অবস্থা।
এই ধরণের ঘটনা থেকে একটা কথা মোটামুটি প্রমাণ হয় যে – সুচিন্তা, ভালবাসা কিংবা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কাজ শুরু করলেই যে তার পরিনতি সবসময় আশাব্যঞ্জক ভাবে শেষ হবে, এমন টা নয়। ব্যক্তি ভেদে, মহৎ চিন্তা নিয়ে কোন কাজ শুরু করলেও মোরাল হ্যাজার্ড এর কারনে মাঝে-মাঝে পরিণতিতে চরম হতাশ হতে হয়।
মোরাল হ্যাজার্ড এর এই তত্ব শুধু অর্থনীতিতেই নয়, ব্যক্তি জীবনেও ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাকে এই তত্ব দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়। ধরুন কেউ একজন প্রেমে পড়ল। প্রিয় মানুষটাকে কোন একদিন সরল স্বীকারোক্তির মত সুন্দর করে সে জানিয়ে দিল – “আমি তোমাকে ভালবাসি। আমরা একসাথে সুখী হতে চাই, ভাল কিছু করতে চাই”।
এই ভালবাসি বলার পরে কেউ প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু কেউ-কেউ আছে প্রত্যাখ্যান না করে জিইয়ে রাখবে। পুকুর থেকে তুলে আনা মাছকে যেমন পরে খাওয়ার জন্য জলের ঘড়ায় জিইয়ে রাখে, এটাও ঠিক তেমনই ষ্ট্রাটেজী। জিইয়ে রাখা মাছ যেমন মনে করে, আমি তো ভালই আছি, ঠিক তেমনভাবেই ঐ মানুষটাও ভাবে “আমার প্রিয় মানুষটা তো আমাকে ভালোই বাসে”। আর এইভাবেই সেই মানুষটা প্রত্যাখ্যাত হয় না কিন্তু কোকেন এর নেশার মত ভালবাসার ঘোরের মধ্যে থেকে exploited হয়।
অনেকটা সময় পর যখন সেই মানুষটা বুঝতে পারে s/he was exploited, তখন অনেকেই ফিরে আসে না। কেন আসে না তার সেই ব্যাখ্যাও অর্থনীতি, ব্যাবসায় এবং মনস্তত্বে আছে।আমি KISS নীতিতে বিশ্বাসী। তাই হুদাই “কেন ফিরে আসে না” এই ব্যাখ্যা দিয়ে আজকের আলোচনা জটিল করব না।আজ শুধু আলোচনা করব, exploited হচ্ছে বুঝার পর যারা ফিরে আসে তাদের সম্ভাব্য পরিণতি কি।
exploited হয়ে ফিরে আসার পর তার সামনে তিনটা পথ খোলা থাকে – ১) ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে নতুন ভাবে জীবন ধারণ করা, ২) আত্মহত্যা করা, ৩) প্রতিশোধ নেওয়া।
যে নতুন ভাবে বাঁচতে চায়, তাকে অভিনন্দন। যে আত্মহত্যা করে, তাকে সমর্থন করি না কিন্তু মরে গিয়ে সে একটা উপকার করে দিয়ে যায়। তাঁর মধ্যে পুঞ্জীভূত হওয়া বিষ বাষ্প অন্য কারো মাঝে আর সংক্রমিত হয় না।
কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়ার ৩ নাম্বার অপশন টা দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ। কারন, প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ঐ মানুষটা নতুন কোন শিকার অন্বেষণ করতে থাকে। তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ সে অন্য কারো উপরে নিয়ে যন্ত্রণা লাঘব করতে চায়। এই প্রতিশোধ যখন একজনের উপরে নিয়ে সফল হয়, তখন এক এ এক এ কাটাকাটি হয়ে প্রক্রিয়াটা গণিতের সমীকরণের মত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।
আমার মা প্রায়ই কথা প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রবাদ বলে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে – “কচুগাছ কাটতে কাটতে একদিন ডাকাত হয়”। মা’কে এটা বলেছিল তাঁর মা। প্রাচীন এই প্রবাদ গুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ। আমি এবং আমার কিছু বন্ধু আছে যারা ক্রিমিনলজি নিয়ে শখের পড়াশোনা করি। এর মধ্যে এক বন্ধু আছে যার ক্রিমিনলজি এনালাইসিস স্কিল বেশ ভাল। সে এটাকে রীতিমত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই তো, ক’মাস আগে আমেরিকায় এক বাংলাদেশী তরুণ ব্যবসায়ী খুন হয়। আমরা আলোচনা করছিলাম এই খুনের সম্ভাব্য মোটিভ কি হতে পারে। বন্ধু যেই মোটিভের কথা বলেছে, দু’দিন পরে পত্রিকার পর্যালোচনায় ঠিক সেই মোটিভটাই আমরা পেয়েছি।
যাই হোক, বলছিলাম কাটাকাটি হয়ে প্রক্রিয়াটা গণিতের সমীকরণের মত বন্ধ হয়ে (মিলে যাওয়ার) যাওয়ার কথা। কিন্তু মানুষের মনস্ত্বত্ব তো সরলরৈখিক লিনিয়ার ইকুইশন না। তাই প্রতিশোধের প্রক্রিয়াটা বন্ধ হয় না। ক্রিমিনাল সাইকোলজিষ্টরা এটাকে বলেন Escalation. কচুগাছ কাটতে-কাটতে ডাকাত হওয়ার মতই, একজনের উপর সফল হওয়ার পর সে আরেকজনের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে। এভাবেই হাত পাকতে থাকে, অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে আর বাড়তে থাকে ফ্যান্টাসি। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় – “বাঘ যেমন নর মাংসের স্বাদ পায় … “।

এবং এভাবেই একটা Vicious Cycle বা দুষ্ট-চক্র তৈরি হয়। এটা অনেকটা কাউন্ট ড্রাকুলার চক্রের মত। উপন্যাসের ড্রাকুলা যেমন মিনা মুরের সাথে প্রেম করে, তাঁর রক্তপাণ করে তাকে পিশাচ বানিয়েছিল। পরে সেই মিনা মুর পিশাচিনী হয়ে সারা লন্ডনে ঘুরে-ঘুরে শিশুদের রক্ত পান করা ডাইনীতে পরিণত হয়েছিলো।
#School_of_Life
You must be logged in to post a comment.