মার্কিন রাষ্ট্রনায়ক বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন লিখেছিলেন – ‘The Constitution only gives people the right to pursue happiness. You have to catch it yourself.’ অর্থাৎ, সংবিধান নাগরিকদের সুখের পেছনে ছোটার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু সুখকে পাকড়াও করতে হবে আপনার নিজেকেই।

প্রয়াত কবি কামিনী রায় লিখেছিলেন –

‘পরের কারনে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলই দাও।
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’

– কামিনী রায়

বেশতো – এটা হচ্ছে শ্রদ্ধেয়া কবির আদর্শ কল্পনা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

১৯৬০ – এর দশকে প্রখ্যাত সামাজিক মনস্তত্ববিদ হেডলি ক্যান্ট্রিল ১২ টি দেশে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেন। তিনি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন ব্যক্তি পর্যায়ে সুখের জন্য একজন মানুষ কোন-কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়। সুখের নিয়ামক হিসেবে তিনি ৯ টি উপাদানের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেগুলো হলো – অর্থনৈতিক, পরিবার, স্বাস্থ্য, মূল্যবোধ ও চরিত্র, কর্ম/চাকরি, সামাজিক, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, ও স্থিতাবস্থা (Table 10.1: Personal Concerns by country, ca . 1960)। আশ্চর্যজনক ভাবে ক্যান্ট্রিল লক্ষ্য করেন যে মানুষের সুখের সবচাইতে বড় নিয়ামক হচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থা। ৬০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ অর্থিক অবস্থাকেই সুখের সবচাইতে বড় মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করে। এর চাইতেও আশ্চর্যজনক নির্মম সত্য হলো সুখের জন্য- ‘মূল্যবোধ ও চরিত্র’ এর গুরুত্ব অর্থের চাইতেও অনেক কম ( মাত্র ৯ থেকে ৪২ শতাংশ)।

Table 10.1: Personal concerns by country

এই উপাত্ত থেকে একটা কথা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় – সমাজে একই সাথে পয়সাওলা এবং দুঃশ্চরিত্র লোক দেখলে অবাক হওয়ার কোন কারন নাই। অর্থাৎ কবি কামিনী রায় যত সুন্দর কল্পনাই করুক – বাস্তবে রাতের অন্ধকারে লোকজন পয়াসাওলাকেই খোঁজে। এবং তার চরিত্র নিয়ে খুব কমই মাথা ঘামায়।

এবং ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় অনেকেই অর্থ অর্জনের জন্য তার পরিবারকেও বিসর্জন দিতে রাজী। কারন প্রকাশিত উপাত্ত প্রমাণ করে যে – সুখের জন্য পরিবার তার সেকেন্ড প্রায়োরিটি। তাই, যৌথ পরিবারের বিভাজন, এবং ঊর্ধমূখী ডিভোর্স রেট এর পেছনে এটা একটা সম্ভাব্য কারন।

লালন সাঁই অর্থ এবং চরিত্রের এমন অদ্ভুত সত্য উপলব্ধি করেই গেয়েছিলো – ‘গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়, তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়?’। হেডলি ক্যান্ট্রিল এবং লালন সাঁই এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে – ক্যান্ট্রিল তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, আর সাঁইজি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ কে অনুভুতির অক্ষরে গেয়ে শুনিয়েছেন।

সাঁইজির মত অত সুন্দর করে গান লিখার সামর্থ্য আমার নাই। তবে সার্বিক আলোচনার সার-সংক্ষেপে আমি এইটুকু বলি –

চরিত্র যাক, টাকা থাক।

– Sajal Kanti Ghosh

যাই হোক, এত হতাশার মধ্যেও নতুন করে কিছু আশার আলো আছে।

সেই আলোর গল্প আরেকদিন করব।

Reference

Easterlin, Richard A. Growth Triumphant: The Twenty-First Century in Historical Perspective. University of Michigan Press, 1996. JSTOR, www.jstor.org/stable/10.3998/mpub.14163. Accessed 20 Dec. 2020.